“রাখিব নিরাপদ,দেখাব আলোর পথ” বাংলাদেশ কারা বিভাগে এই ভিশনকে সামনে রেখে কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধ পরিকর। জনস্বার্থে ও জন কল্যাণে কারাগারে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সেবা কার্যক্রম সহজীকরণের নিমিত্তে ও সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রধান প্রধান সেবাসমূহ ও নিয়ামাবলী নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
১। আদালত হতে আগত বন্দীদের প্রসঙ্গে
ক) প্রত্যেক বন্দী আদালত হতে আগমনের পর বন্দীদের শ্রেণীবিন্যাস করতঃ যথাযথ আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
খ) অসুস্থ বন্দীদের তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ চিকিৎসা প্রদানের নিমিত্তে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গ) নির্ধারিত তারিখে বিচারাধীন বন্দীদের সংশিষ্ট আদালতে হাজিরা নিশ্চিত করা হয়।
ঘ) কোন বন্দীর হাজিরার তারিখ নির্দিষ্ট না থাকলে আদালতের সাথে যোগাযোগ করতঃ হাজিরার তারিখ সংগ্রহপূর্বক আদালতে হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়।
ঙ) নবাগত বন্দীদের আদালত হতে আসার সময় তাদের সাথে রক্ষিত টাকা পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি যথাযথ হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
চ) অসহায় ও অসচ্ছল বন্দীদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে সরাসরি আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে যথাযথ আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়।
ছ) দন্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের সুবিচার প্রাপ্তিতে উচ্চ আদালতে আপিল দাখিলের ব্যাপারে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতা প্রাদান করে থাকে।
২। বন্দীদের সাথে দেখা-স্বাক্ষাত সংক্রান্ত ঃ
ক)বর্তমান পেক্ষাপটে আত্মীয়-স্বজনেরা হাজতী/কয়াদি বন্দীর সাথে ১৫ দিন অন্তর অন্তর একবার করে দেখা করতে পারে।
খ) ডিটেনু ও নিরাপদ হেফাজতী বন্দীর সাথে দেখা করতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারিক আদালতের অনুমতি প্রয়োজন।
গ) বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা-স্বাক্ষাত সর্বোচ্চ ১০ (ত্রিশ) মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে এবং সর্বোচ্চ ০১ (এক) জন ব্যাক্তি একজন বন্দীর সাথে দেখা করতে পারবে।
ঘ) বন্দীদের সাথে দেখা করার জন্য কোন প্রকার টাকা পয়সা নিষিদ্ধ। যদি কেউ টাকা দাবি করে জেল সুপার অথবা জেলারকে অবহিত করুন।
ঙ) মোবাইল,মদ,গাঁজা,হেরোইন,ফেনসিডিল,নেশাজাতীয় ট্যাবলেট, আগ্নেয়াস্ত্র,বিস্ফোরক দ্রব্য,ধারালো অস্ত্র টাকা পয়সা, রান্না করা খাবার ইত্যাদি নিয়ে সাক্ষাত কক্ষে পবেশ করা যাবে না।
চ) বন্দীদের সাথে তার আইনজীবির দেখা সাক্ষেতের সুযোগ প্রদান করা হয়।
ছ) বন্দীদের সাথে দেখা করার জন্য জেল সুপারের বরাবর আবেদন করতে হবে। যারা আবেদনপত্র লিখতে সক্ষম নন তাদের সহায়তা করার জন্য রিজার্ভ গার্ডে কর্তব্যরত কর্মচারী স্লিপের মাধ্যমে দেখা করার সুযোগ পাবেন।
জ) নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বা পরে দূর-দুরান্ত থেকে আগত সাক্ষাত প্রর্থীদের সাথে বন্দীদের সাক্ষাতের জন্য সাধারনতঃ মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে অনুমতি প্রদান করা হয়।
ঝ) কারাগারে আটক বন্দী অথবা কারো সম্বন্ধে কোন তথ্য জানতে চাইলে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত রিজার্ভ গার্ডে কর্মরত প্রধান কারারক্ষীর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ঞ) সাক্ষাত প্রার্থীদের সহজে এবং ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রেয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহের লক্ষ্যে প্রত্যেক কারাগারের বাহিরে একটি করে ক্যান্টিন/দোকান চালু করা হয়েছে। যাতে আগত সাক্ষাত প্রার্থীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ন্যায্যমুল্যে ক্রয় করে বন্দীদের সরবরাহ করতে পারে। এতে একদিকে যেমন কারাগারে অবৈধ দ্রব্যাদি প্রবেশ করতে পারে না, অন্যদিকে সাক্ষাত প্রার্থীরা সহজলভ্য ও সনতেজ জিনিস ক্রয় করতে পারেন। এখানে আরো উলেখ্য যে, আত্নীয়-স্বজন কর্তৃক দূর-দুরান্ত থেকে বন্দীদের আনিত খাবার বাসি হয়ে যায় যা খেলে বন্দীরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
ট) স্বাক্ষাত প্রার্থীদের কর্তৃক বন্দীদের জন্য দেয়া মালামাল যথাযথ ভাবে ও যত্ন সহকারে বন্দীদের নিকট পৌছানো নিশ্চিত করা হয়।
৩। বিশ্রামের ব্যবস্থাঃ
ক) প্রত্যেক কারাগারে বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে আগত সাক্ষাত প্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার রয়েছে।
খ) বিশ্রামাগারে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক পাখা, পানি এবং টয়লেটের সু- ব্যবস্থা রয়েছে।
ঘ) অফিসে কোন প্রয়োজনীয় সংবাদ পৌছাতে হলে প্রধান ফটকের বাহিরে রিজার্ভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষীর মাধ্যমে তা পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে
৪। পিসিতে টাকা জমাদান পদ্ধতিঃ
ক) কারাগারে আটক বন্দীদের ব্যক্তিগত তহবিলে(পিসি) অর্থ জমা রাখার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
খ) কেউ কারাগারে আটক বন্দীদের পিসিতে টাকা জমা করতে চাইলে ডাক যোগে মানি-অর্ডার করতে পারেন।
গ) ব্যক্তিগত ভাবেও বন্দীদের আত্মীয় -স্বজন জমা স্লিপের বিপরিতে পিসিতে অর্থ জমা দিতে পারেন।
ঘ) রিজার্ভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষীর সহযোগিতায় এই অর্থ জমা দেওয়া যাবে। অর্থ জমাদানের ব্যাপারে কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয় না।
৫। ওকালত নামা স্বাক্ষর প্রসঙ্গেঃ
ক) ওকালতনামা স্বাক্ষরের ব্যাপারে অবৈধ অর্থের লেনদেন রোধের জন্য প্রত্যেক কারাগারে প্রধান ফটকের সামনে ওকলতনামা দাখিলের জন্য বাক্স রাখা হয়েছে।
খ) নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর বাক্স খুলে ওকালতনামা বন্দীর স্বাক্ষর করিয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তার সত্যায়ন এনে বন্দীর কৌশলী/আত্মীয়ের নিকট হস্থান্তর করা হয়।
গ) ওকালতনামা বন্দীর স্বাক্ষরের জন্য কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না। যদি কেউ এই ব্যাপারে কোন অর্থ দাবি করে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রিজার্ভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষী অথবা সরাসরি জেল সুপার/জেলার- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
৬। জামিন/মুক্তি প্রসঙ্গেঃ
ক) আদালত হতে প্রাপ্ত মুক্তি/জামিন আদেশের মুক্তিযোগ্য বন্দীদের নামের তালিকা প্রধান ফটকের সামনে নোটিশবোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়।
৭। বন্দীদের সাথে আচরণ প্রসঙ্গেঃ
ক) কারাগারে আটক বন্দীদের সাথে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা হয়।
খ) কারাগারে আটক বন্দীকে অপরাধ ছাড়া কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করা হয় না।
গ) কারাবিধি অনুসারে প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক বন্দীর খাবার ও আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
৮। চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ
ক) প্রত্যেক কারাগারে হাসপাতাল বিদ্যমান রয়েছে। অসুস্থ বন্দীদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে বহিঃর্বিভাগ রোগী হিসেবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পথ্য প্রদান করা হয়। অসুস্থ বন্দীদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়জনে উন্নত চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাহিরে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
খ) কারাভ্যন্তরে মাদকাসক্ত বন্দীদেরকে সাধারণ বন্দীদের থেকে আলাদা করে পৃথক আবাসনের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
৯। প্রশিক্ষণঃ
ক) কারাগারে আটক বন্দীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিরুপন করতঃ তাদের আগ্রহ অনুসারে বিভিন্ন ট্রেডে নিয়োজিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
খ) কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদেরকে বিভিন্ন ট্রেডে নিয়োজিত করে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করতঃ দক্ষ /প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়। যাতে করে বন্দী সাজা ভোগের পর মুক্ত জীবনে ফিরে গিয়ে নানারকম বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।
গ) বন্দীদের চরিত্র সংশোধনের জন্য নানাবিধ প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু রয়েছে। যেমনঃ- চুলকাটা টেলিভিশন, ফ্যান,আসবাবপত্রতৈরি ইত্যাদি ।
১০। বন্দীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম প্রসঙ্গেঃ
ক) কারাগারে আটক নিরক্ষর বন্দীদেরকে অক্ষরজ্ঞান দানের জন্য গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং প্রত্যেক নিরক্ষর বন্দীকে বাধ্যতামূলকভাবে এই শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। যাতে করে কারাগার হতে মুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়ে তারা তাদের দায়-দায়িত্ব,অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ হয়ে সুস্থ সমাজ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
খ) মরণব্যাধি ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বন্দীদেরকে সজাগ করা হয় এবং মরণব্যাধি রোধকল্পে বন্দীদেরকে নানারকম পন্থাসম্পর্কে সচেতন করা হয়।
গ) কারাগারে আটক বন্দীদের নিজ নিজ ধর্ম প্রতিপালনের স্বার্থে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগসহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ঘ) প্রতিনিয়ত বন্দীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ঙ) বন্দীদের দরবার ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং তাদের সমস্যাগুলি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা হয় এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চ) নির্ধারিত তারিখে হাজিরার নিমিত্তে বন্দীদের কোর্টে প্রেরণ নিশ্চিত করা হয়।
ছ) বন্দীদের চিত্তবিনোদনের জন্য কারাভ্যান্তরে টিভি,ক্যারামবোর্ড, ভলিবল,ব্যাডমিন্টন ও লুডু ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়।
জ) সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের দেখা-স্বাক্ষাতের সুবিধার্থে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজ জেলায় নিকটস্থ কারাগারে বদলির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন নিশ্চিত করা হয়।
ঝ) প্রত্যেক কারাগারের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন চালু রাখা হয়েছে যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র মজুদ রাখা হচ্ছে। বন্দীরা চাহিদা অনুযায়ী ক্যান্টিন হতে উক্ত মালামাল ক্রয় করতে পারেন ।